কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।।
হাজারো স্বপ্ন নিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্বপ্ন পূরনে শতশত শিক্ষার্থী ভর্তি হয় কুষ্টিয়ার ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটে। কিন্তু হঠাৎই থমকে যায় সেই স্বপ্ন। আটকে যায় প্রতারনার ফাঁদে। অর্থের নেশায় সেই সকল শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের কবর রচনা করে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের প্রতারক মালিক ডাক্তার হোসেন ইমাম ও সেলিম। উল্লেখ্য যে, এই প্রতিষ্ঠানে আরেকজন মালিক ছিলেন তার নাম রাজু, তার বাড়িও দৌলতপুর উপজেলায়, তাকে সুকৌশলে ডাক্তার হোসেন ইমাম বের করে দেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ দায়ের করেন।
ইতিপূর্বে ওই রাজুর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ও অর্থ তসরুপ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিউজ প্রকাশ করে এই সুচতুর ডাক্তার হোসেন ইমাম। এ বিষয়ে রাজুর সঙ্গে কথা বললে, তিনি প্রতিবেদককে জানান আমি ডাক্তার হোসেন ইমাম এর কাছে ১৫ লক্ষ টাকা পাব সে কারণে আমাকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পদ থেকে বাদ দিয়েছে এবং আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করাচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিচার শালিশ চলছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের মালিকের প্রতারনায় তালমাতাল হয় ৩২জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন।
এই প্রতিষ্ঠানে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ৫০টি আসনের বিপরীতে ভর্তি করা হয় ৮২জন শিক্ষার্থীকে। অতিরিক্ত ৩২জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে প্রতারনা শুরু করে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউট। কখনো ভূয়া রেজিষ্ট্রেশন দেখিয়ে আবার কখনো রেজিষ্ট্রেশন করানোর নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চাপ। তবুও শেষ পর্যন্ত ৩২জন শিক্ষার্থীর হয়নি রেজিষ্ট্রেশন। অসহায় ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের পরিবার বার বার অনুরোধ করেও মিলেনি মুক্তি। মিলেছে হুমকি ধামকি ও প্রতারনার কষাক্ষাত। ফলে সেই সকল ছাত্র ছাত্রীর কাউকে খোয়াতে হয়েছে বছর, আবার কারো শিক্ষা জীবনের ঘটেছে সমাপ্তি। ভর্তির প্রমানাদি সহ প্রশাসন ও বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পায়নি ন্যায় বিচার। প্রতারনা ও ক্ষমতার কাছে হেরেছে বার বার।
এখনো বিচারের আশায় সেই সকল শিক্ষার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে দ্বারে দ্বারে। এতো কিছুর পরেও টনক নড়েনি প্রশাসনের, থামেনি ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের মালিকদের প্রতারনা। বাংলাদেশ নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের নীতিমালা না মেনেই বার বার পরিবর্তন করা হয়েছে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের ঠিকানা। আটা হয়েছে নতুন নতুন প্রতারনার ফাঁদ। যা অধিকতর তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলার ভুক্তভোগী ছাত্রী বিউটি জানায়, অনেক স্বপ্ন নিয়ে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটে ভর্তি হই। শুরু হয় ক্লাস, শুরু হয় রেজিষ্ট্রেশন। তখন জানতে পারি আমার জন্য সিট বরাদ্দ নেই। অসহায় হয়ে প্রতিষ্ঠান্ কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও রেজিষ্ট্রেশন করাতে পারি নাই।
বাধ্য হয়ে পরের বছর অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই। আমি আমার সাথে এই প্রতারনার বিচার চাই। আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গোপালপঞ্জের সুমন জানায়, আমি ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটে ১লক্ষ ২০হাজার টাকা চুক্তি করে ভর্তি হই। কিছুদিন পরেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ রেজিষ্ট্রেশন বাবদ অতিরিক্ত ৩০হাজার টাকা দাবী করে। আমি না দিতে চাইলে রেজিষ্ট্রেশন হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরবর্তিতে বাধ্য হয়ে অতিরিক্তি ৩০হাজার টাকা দেই। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি আমাকে যে রেজিষ্ট্রেশনের কাগজপত্র দেখানো হয়েছে তা ভূয়া। ফলে আমি পরিক্ষা দিতে পারি নাই।
এখান থেকেই আমার শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। আমি এই প্রতারকদের কঠোর বিচার দাবী করছি। আরো এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গার সোনিয়া জানায়, আমি ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হই। নবীন বরনের দিন জানতে পারি আমার জন্য সিট বরাদ্দ নেই। আমার রেজিষ্ট্রেশনও হবে না। তাই আমি আমার শিক্ষা জীবন বাঁচানোর জন্য অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই।
কিন্তু আমি ঐ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাবদ সে টাকা জমা দিয়েছিলাম, তা ফেরত নিতে গেলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। অনেক চেষ্টার পর কিছু টাকা ফেরত পেলেও বাকিটা আর ফেরত পায়নি। শিক্ষার নামে প্রতারনাকারী এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের মালিক সেলিম জানায়, আমার জানা মতে এই ধরনের ঘটনা আমার প্রতিষ্ঠানে ঘটেনি। এই ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে ক্রিসেন্ট নার্সিং ইন্সষ্টিটিউটের আরেক মালিক ডা. হোসেন ইমামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় কুষ্টিয়ার সূধি সমাজের অনেকেই বলছেন, প্রতারক শাহেদ ও সাবরিনার মত এখনই সময় এই সকল প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা