বিশেষ প্রতিনিধি ॥
নিজেদের সকল অপকর্ম ঢাকতে আর কত নিচে নামবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও তার অনুসারিরা। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার ঝড় বয়ছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মিডিয়াতে নিজেদেরকে ধোয়া তুলশির পাতা আর প্রতিপক্ষকে ক্যাম্পাসের খলনায়ক বানাতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে ভিসি ও তার অনুসারিদের বিরেুদ্ধে। আর এর নেপথ্যে মুল কাজ করে চলেছে ক্যাম্পাসে ভিসির প্রধান সেনাপতি বলে পরিচিত ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগকারী প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান এবং ভিসির পোষ্যপুত্র বলে পরিচিত ইবি ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব এমনটিই শোনা যাচ্ছে।
জানা যায়, চলতি মাসের ২০ তারিখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মেয়াদ শেষ হবে। বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারীকে দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসি বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভিসির অনুসারিরা। তারা বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় ভিসির সফলতার কিছু কিচ্ছা কাহিনী তুলে ধরে ভিসি ড. আসকারীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সেরা ভিসি হিসেবে আক্ষা দেয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। আর তখনি সত্য ঘটনা উদঘাটন করতে মাঠে নামেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, জাতীয়, স্থানীয় ও অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকরা। প্রকৃত তথ্য জানতে সাংবাদিকরা ইবির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের কাছে ধর্ণা দিলেও ভিসির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি কেউ। অবশেষে ভিসির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বীরদর্পে ভিসি ও তার অনুসারিদের সকল অপকর্মের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও ইবি শাপলা ফোরামের প্রতিষ্ঠালগ্নের অন্যতম নেতা প্রফেসর আব্দুল মুঈদ, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ও ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুল আরেফিন, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক স্বপন, ইবি কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম-সম্পাদক মীর মোঃ মোর্শেদুর রহমান এবং ইবি ছাত্রলীগের কর্ণধর, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও আপোষহীন ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শেখ মিজানুর রহমান লালন। তাদের এই বীরত্বে যখন ভিসি ও তার অনুসারিদের সকল অপকর্ম বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ পেতে থাকে তখন শুরু হয় এই ৫ জনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এদেরকে ক্যাম্পাসের খলনায়ক বানাতে ভিসি ও তার অনুসারিরা তাদের বিরুদ্ধে মানহানীকর ও মনগড়া কিছু কল্পকাহিনী তৈরী করে। শুধু কাহিনী তৈরীয় নয়, এদের বিরুদ্ধে গত ১২ আগস্ট “ইবিতে ঘুরেফিরে পাঁচজন, কেন তাদের এ অসন্তোষ!” শিরোনামে দু’টি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশ করা হয়। তবে কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সংবাদে ৫ জনের বিরুদ্ধে মানহানিকর বিভিন্ন কথা তুলে ধরার এক পর্যায়ে ভিসির গুণাগুন শুরু করায় পাঠকরা বুঝতে পারেন সংবাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যে কি। আর করাই বা এই সংবাদ প্রচারের পেছনে জড়িত আছে। পাঠকরা ৫জনের বিরুদ্ধে সংবাদটি চ্যালেঞ্জ করে মন্তব্য করার কিছু সময়ের মধ্যে পত্রিকার পাতায় সংবাদটি আর দেখা যায় না।
একটি সূত্র জানায়, প্রফেসর আব্দুল মুঈদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত একজন ব্যক্তি। তিনি নিয়মিত যুগান্তর পত্রিকায় কলাম লেখেন। গত ৯ আগস্ট তিনি “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসন্তোষ কেন” শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও ভিসির বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। সেখানে ভিসি বা ভিসির অনুসারীদের দাবি অনুযায়ী ১২ তম ভিসি হিসেবে ড. আসকারী সফল ভিসি সেটা যে ঠিক নয়, তা তাঁর লেখুনির মাধ্যমে উঠে আসে এবং মেগা প্রকল্পের ৫৩৭ কোটি টাকা যে বর্তমান ভিসির সফলতা নয় তাও স্পষ্ট হয়। কারন বর্তমান ভিসির পূর্বে ৫/৬ জন ভিসি সফলতা ও সম্মানের সাথে বিদায় নিয়েছেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অনেক নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও কম বরাদ্দ পেয়েছে তাও প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া গত ২৬ জুলাই প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুল আরেফিনের নেতৃত্বে ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের আয়োজনে কুষ্টিয়া শহরে ভিসির অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেই মানববন্ধনে প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক স্বপন এবং মীর মোর্শেদও বক্তব্য রাখেন। ছাত্র নেতা লালনের নেতৃত্বে সেদিন মানববন্ধনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। আর এ কারনেই ভিসি এবং তার অনুসারিদের বড় গাঁত্রদাহ হয়ে উঠেছেন ভিসি বিরোধী এই ৫জন আপোষহীন ব্যক্তি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা বলেন, ক্যাম্পাসের সুন্দর পরিবেশ নষ্টের মুলহোতা ভিসির অতি আস্তাভাজন সাবেক প্রক্টর মাহবুব এবং তাদের সহযোগিতায় ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় থেকে হয়ে আসা ইবি ছাত্রলীগের (মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি, কর্মীদের দ্বারা অবাঞ্চিত ও ক্যাম্পাস থেকে বিতারিত) সাধারণ সম্পাদক রাকিব। তারা বলেন, ভিসির কাছ থেকে এদের সুবিধা নেয়া প্রায় শেষের দিকে। তাই তারা হয়তো বা অন্য কারো হয়ে এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে। তারা কৌশলে ভিসি বিরোধীদের বিপক্ষে কথা বলে বা নিউজ করিয়ে ভিসির প্রতি ভিসি বিরোধীদের আরো চটিয়ে তুলছে। যাতে করে ভিসি বিরোধীরা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠে। তারা বলেন, ভিসি কুষ্টিয়া শহরের বসবাসকালে শহরের বিভিন্ন এলাকার অনেক বাসায় অবাধে যাতায়াত করতেন। শহরের একটি অফিসে বসার কাহিনীও সবাই জানেন। চাকী বাবুর দোকানের কাহিনী সেদিনের মানববন্ধনে বক্তাদের বক্তৃতা এখন মানুষের মুখে মুখে। তাছাড়া ‘ইবি ভিসির সঙ্গে এক সুন্দরী মহিলার ছবি নিয়ে তোলপাড়’ এবং ‘এক মাতাল ভিসি’র কান্ড’ শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি আজও মানুষ ভুলেনি। তারা আরও বলেন, ড. মাহবুব প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ক্যাম্পাস ছুটির পরে ড্রাইভার পোল্লাদ ও ছাত্র রাকিবকে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে পরতেন। ড্রাইভার পোল্লাদ একদিন মাদকসহ ধরা পরেছিল। সেই মাদকের প্রকৃত মালিককে আজও তা জানা যায়নি। এছাড়াও প্রক্টর মাহবুব গভীর রাতে পোল্লাদের গাড়িতে চরে শহরের কোথায় যেতেন যা আজও রহস্যময়। এছাড়া ছাত্রনেতা লালন ভিসি ও ড. মাহবুবের অপকর্মের বিরোধীতা করায় লালনের বাড়িতে সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠানো হয়েছিল লালনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এমন অভিযোগও রয়েছে ড. মাহবুবের বিরুদ্ধে। এছাড়া রাকিব মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত আছে বলে শোনা যায়। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগটি আজও প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযোগটি কতটুকু সত্য তা জানা যায়নি। তারা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শোনা যায়। অভিযোগগুলো সত্য কি মিথ্যা আমরা জানিনা। তবে তারা সর্বক্ষেত্রে অতিমাত্রাই বাড়াবাড়ি করে চলেছে, যা ঠিক নয়। কারণ অনেক ঘটনার প্রমাণ করতে গেলে দেখা যাবে ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খায়নি’। এমনটি হবে তাদের বিষয়ে। তারা আরও বলেন, নিজেদের দোষ ঢাকতে আর কত নিচে লামবে ইবি ভিসির অনুসারীরা?
প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ছাত্রনেতা লালন বলেন, ক্ষমতার লোভে মানুষ যে এত নোংরামী করতে তা ভিসি ও তার অনুসারিদের দেখলে বোঝাযায়।
মীর মোর্শেদ বলেন, ২০১৬ সালে আমি বর্তমান ভিসি ও সাবেক প্রক্টর মাহবুবের ইন্ধনে তৎকালীন ভিসির পক্ষ নিয়ে ভিসি বিরোধীদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায়, আমি রক্তাত্ব হয়। কিন্তু যখন বুঝতে পারি বর্তমান ভিসি ও ড. মাহবুব আমাকে ব্যবহার করছে তখন আমি তাদের সঙ্গ ত্যাগ করি।
প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক স্বপন বলেন, ইবিতে বর্তমানে কঠোর শাসন চলছে। ভিসির পক্ষে থাকলে ফেরেস্তা আর বিপক্ষে থাকলে তাকে হতে হয় হেনেস্তা। আমি ভিসির বিপক্ষে থাকায় আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু আমি দোষি না হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি আজও।